থালাবাটির বেদনা – গাজার পথে পথে হাহাকার আর নীরব মানবতা
﷽
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
🕋 আল্লাহ তাআলার নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
✍️ লেখক: মুফতি আলাউদ্দিন রহমানী
"একটি থালা অনেক কিছু বলে — শুধু যদি কেউ কান পেতে শুনত..." গাজা এখন আর কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি এক একটি ক্ষুধার্ত বুকের নাম, যেখানে প্রতিটি হৃদপিণ্ড ধুকধুক করে একমুঠো খাদ্যের আশায়। শিশুদের হাতের খেলনা এখন আর গাড়ি কিংবা বল নয় — বরং একটা ছোট বাটি, যেখানে সে চায় একটু চাল, একটু পানির স্বপ্ন। মায়েরা তাদের বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কষ্টে কান্না করছে — কারণ সন্তান ক্ষুধায় কাঁদে, অথচ দেওয়ার কিছু নেই। পুরুষেরা ঘর ভেঙে পথে নেমেছে, হাতে থালাবাটি — আর কণ্ঠে সেই চিরন্তন আর্তনাদ: > “আল্লাহ্, আর কত ক্ষুধা! আর কত নীরবতা? আর কত মৃত্যু?” এই দৃশ্য শুধু গাজার নয় — এটি মানবতার লজ্জা, এটি সভ্যতার ছিন্ন মুকুট। এখন থালাবাটি যেন প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যেন কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার আওয়াজ। মুসলিম উম্মাহ — কোথায় আজ আমাদের হৃদয়? যে উম্মাহর নাম "খাইর উম্মাহ", যারা ছিল "আল-মু’মিনু إِخوةٌ" — তারা কোথায় আজ? গাজার এই ভয়াবহ দুর্যোগে কোথাও একতা নেই, নেই সম্মিলিত পদক্ষেপ, নেই বাস্তব সাহায্য। তাদের প্রতি প্রতিদিন মিসাইল পড়ছে, কিন্তু আমাদের উম্মাহর হৃদয়ে যেন আবেগের মিসাইলও নেই। সাহায্য আসছে কিছু ব্যক্তি থেকে, কিছু NGO থেকে — কিন্তু গোটা উম্মাহর পক্ষে কোনো রাষ্ট্র, কোনো সেনা, কোনো রাষ্ট্রপ্রধান এক বাক্যে বলেনি: > “আমরা গাজার পাশে আছি, জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো!” সৌদি, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান — সবাই একেকটা লাশের মতো ওআইসি আছে, আরব লীগ আছে, জাতিসংঘের ইসলামিক সদস্য রাষ্ট্রও আছে — কিন্তু কারো কণ্ঠে গর্জন নেই, কারো মুখে বয়ান নেই, কারো হাতে খাদ্য নেই। তারা ব্যস্ত নিজেদের বাজেট, বৈদেশিক বিনিয়োগ আর ফুটবল স্টেডিয়াম নিয়ে। তাদের চোখে গাজার রক্ত লাল নয় — রাজনীতির কৌশল মাত্র। বিশ্ব মানবতা? শুধু উদ্বিগ্নতা! মানবতা এখন শুধু রিপোর্টে, রিপোর্টারদের কণ্ঠে। জাতিসংঘের বিবৃতি আর পশ্চিমা দেশের “deep concern” — এগুলো পলিথিনে মোড়া বিবেকহীন শব্দ। তাদের কাছে গাজা যেন একটা গেম — কখন শোক, কখন সন্ত্রাস, কখন চুপচাপ। একমাত্র কিছু সাধারণ মুসলিম আর সংগঠন — এখনো গাজার পাশে যেখানে রাষ্ট্রগুলো নিরব, সেখানে কিছু গরিব মুসলমান, কিছু ছাত্র, কিছু মুফতি, কিছু সাংবাদিক, কিছু মা — এখনো ফেসবুকে, রাস্তায়, মসজিদে, মেহনত করছে গাজার জন্য। এটাই প্রমাণ করে — উম্মাহ মরে নাই, কিন্তু নেতৃত্ব বিকল। খিলাফাহ ফিরে না আসা পর্যন্ত এই থালাবাটি বারবার ফিরবে উম্মাহর মাথায় যতদিন আল্লাহর দ্বীনের শাসন ফিরবে না, যতদিন খিলাফাহ ও ইমানি নেতৃত্ব ফিরবে না — ততদিন গাজার মতো শহরগুলোতে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ নয়, রক্ত খাবে।
আল্লাহ সাহায্য করুন
উত্তরমুছুনআমিন
মুছুন