শিশুরা কেন এত দৌড়াদৌড়ি আর দুষ্টামি করে? ৭ টি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

  1. ভাতিজি সামিয়া 

শিশুদের দৌড়ঝাঁপ ও সারাক্ষণ দুষ্টামি করা । যেমন মাটি নিয়ে দুষ্টুমি করা, হাতের নাগালে যেটা পায় সেটাই ধরে ফেলা প্রভৃতির ৭ টি স্বভাবের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিচে উল্লেখ করা হলো।

🧠 শৈশবের বৈজ্ঞানিক রহস্য: ছোট ছোট স্বভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বড় কারণ
শিশুদের জগতটা এক জাদুকরি রহস্যে ভরা। তাদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি প্রশ্ন, এমনকি ছোট ছোট জেদের পিছনেও লুকিয়ে আছে মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ ও প্রকৃতির অপার লীলা। 

১. দৌড়াদৌড়ি ও অফুরন্ত শক্তি: বেড়ে ওঠার বিস্ফোরণ
শিশুরা যেন দুরন্ত এক ঝরনা—সবসময় ছোটাছুটি করছে। এর কারণ হলো তাদের মাংসপেশি এবং হাড় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দ্রুত বিকাশের জন্য শরীর প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে। এই অতিরিক্ত শক্তি খরচ করার জন্যই তারা দৌড়ায়, লাফালাফি করে। এটি কেবল শক্তি ক্ষয় নয়, বরং এটি ভারসাম্য (Balance), সমন্বয় (Coordination) এবং পেশি নিয়ন্ত্রণের (Motor Skills) মতো গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।

২. কেন তারা এত কৌতূহলী ও প্রশ্ন করে?
শিশুদের মস্তিষ্ক হলো একটি ক্ষুধার্ত স্পঞ্জ। তাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস (Hippocampus) অংশটি নতুন তথ্য শোষণে এবং স্মৃতি তৈরিতে অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। এই কৌতূহল তাদের জ্ঞানার্জনের মূল চালিকাশক্তি।
 * প্রশ্ন করার কারণ: প্রতিটি প্রশ্নের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের নিউরন সংযোগগুলি (Synaptic Connections) দ্রুত তৈরি হয়। 'কেন,' 'কীভাবে,' এবং 'কখন'—এই প্রশ্নগুলি শেখার একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি। তারা কেবল তথ্য জানতে চায় না, বরং জগৎকে একটি কাঠামোবদ্ধ উপায়ে বুঝতে চায়।

৩. সহজ আনন্দ ও অল্পতেই খুশি: ডোপামিন ডান্স
শিশুরা অল্প কিছুতেই হাসে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্কের কাছে তুচ্ছ হতে পারে। এর মূল কারণ হলো তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন (Dopamine) হরমোন খুব সহজে এবং দ্রুত নিঃসৃত হয়। ডোপামিন হলো 'ভালো লাগার' অনুভূতি বা রিওয়ার্ড সিস্টেমের সাথে যুক্ত একটি নিউরোট্রান্সমিটার। সামান্য অর্জন বা নতুন অভিজ্ঞতায় তাদের মস্তিষ্ক দ্রুত পুরস্কৃত হয়, ফলে তারা অল্পতেই খুশি হয়।

৪. কেন অল্পতেই রেগে যায় বা কাঁদে? আবেগের বিস্ফোরণ
শিশুদের আবেগ প্রকাশের তীব্রতা দেখলে মনে হতে পারে তারা অতিরিক্ত জেদি। আসলে, এটি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের একটি পর্যায়। প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (Prefrontal Cortex), যা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিণতির বিচার করে, তা তখনও পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। ফলে, যখন তারা হতাশ হয় বা কোনো কিছু চায়, তারা সেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এবং তা কান্না বা রাগের মাধ্যমে প্রবলভাবে প্রকাশ পায়।

৫. খেলার মাধ্যমে শেখা: খেলনা এবং খেলার গুরুত্ব
খেলা শিশুদের জন্য কেবল বিনোদন নয়, এটি তাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যম।
 * পুতুল নিয়ে খেলা (Role Play): পুতুল নিয়ে খেলার সময় শিশুরা নকল করতে (Mirror Neurons) ভালোবাসে। এটি তাদের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, অন্যের প্রতি সহানুভূতি (Empathy) এবং যত্নশীল হওয়ার দক্ষতা শেখায়। পুতুলকে খাওয়ানো বা ঘুম পাড়ানো—এগুলো হলো বাস্তব জীবনের ভূমিকা অনুশীলন।
 * মাটি, বালি বা জল নিয়ে খেলা (Sensory Play): এই খেলাগুলি তাদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের বিকাশ ঘটায়। মাটি বা বালি স্পর্শ করার মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের স্পর্শের সংবেদনশীলতা বাড়ে। এটি তাদের মনোযোগ, সমস্যা সমাধান এবং সূক্ষ্ম পেশি সঞ্চালনের দক্ষতা (Fine Motor Skills) বিকাশে সাহায্য করে।

৬. অনুকরণ (Nakal) ও মিরর নিউরন: দেখে শেখা
শিশুরা দ্রুত শেখে কারণ তাদের মস্তিষ্কে মিরর নিউরন (Mirror Neurons) অত্যন্ত সক্রিয়। এই নিউরনগুলি অন্যদের কাজ করতে দেখলে নিজের মস্তিষ্ককে সেভাবে উদ্দীপিত করে, যেন তারা নিজেরাই কাজটি করছে। এটিই অনুকরণ বা নকল করার প্রধান বৈজ্ঞানিক কারণ এবং এটি হলো ভাষা শেখা, সামাজিক রীতিনীতি এবং জটিল দক্ষতা অর্জনের মূল ভিত্তি।

৭. কল্পনার জগৎ ও ঘুমের প্রয়োজন
 * প্রবল কল্পনা শক্তি: শিশুদের মস্তিষ্ক তখনো বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যে সঠিক সীমারেখা তৈরি করতে শেখেনি। ফলে তারা তাদের কল্পনাকে সত্যি ভাবতে পারে। এই কল্পনা শক্তি তাদের সৃজনশীলতা, ভাষা বিকাশ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
 * ঘুমের প্রয়োজনীয়তা: দ্রুত শারীরিক ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য শিশুদের বেশি ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সারাদিনের নতুন তথ্যগুলিকে সাজিয়ে রাখে, অপ্রয়োজনীয় সংযোগগুলি ছেঁটে ফেলে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিগুলিকে মজবুত করে—যা তাদের শেখার প্রক্রিয়াকে দৃঢ় করে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি প্রমাণ করে যে শৈশব কেবল একটি সময়ের পর্যায় নয়, বরং এটি দ্রুততম শেখার, শারীরিক বিকাশের এবং আবেগময় বৃদ্ধির এক বৈজ্ঞানিক বিস্ফোরণ।
আপনি যদি চান, আমি এই লেখাটিকে আরও সহজ ভাষায় শিশুদের জন্য একটি মজার গল্প বা ছড়ার আকারে লিখে দিতে পারি।
সূত্র বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে



 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মসজিদ কমিটির সভাপতি হবেন ডিসি ও ইউএনও: ধর্ম উপদেষ্টা

থালাবাটির বেদনা – গাজার পথে পথে হাহাকার আর নীরব মানবতা

ঢাকার উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত

জাতীয় সমাবেশে ৭ দফার দাবির বার্তা পৌঁছাতে চায় জামাত

এআইয়ের বাপ চলে আসলো — গুগলের NotebookLM-এর বিস্ময়কর ক্ষমতা

দখলদারদের বর্বর অভিযান: বাড়িঘর ধ্বংস, ১২ নিরীহ ফিলিস্তিনি গ্রেফতার

পরীক্ষার ফি বণ্টনের ন্যায়সংগত পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত?

গাজায় সাহায্যপ্রার্থী নিরীহ মানুষের ওপর হামলা, ইসরায়েলের ‘গাজা দখলের পরিকল্পনা’ প্রকাশ

AI প্রযুক্তির অন্ধকার দিক: ১৫টি ভয়াবহ ক্ষতি যা আপনার জানা দরকার

🌹🌹আমার হৃদয়ের কবিতা 🌹